রংপুরের জমিদার বাড়িগুলো দেখে নিন Zamindar Houses in Rangpur ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর থেকেই অত্র অঞ্চলের জমিদার জোতদাররা নবাবগঞ্জ-রাধাবল্লভ কেন্দ্রিক আধুনিক রংপুরে (বর্তমান রংপুর শহর) বাগানবাড়ী, কাছারিঘর বা কুঠি বানাতে থাকে। ঠিক এই সময়টাতেই বড় রংপুর (মীরগঞ্জ, তামপাট) ও মাহীগঞ্জ কেন্দ্রীয় আদি রংপুর থেকে বর্তমান রংপুর গড়ে ওঠে। সেই সময় মোট ১৮ টি জমিদার বাড়ি বা জমিদারদের কাচারী কুঠি বাড়ি ছিল।
উত্তরবঙ্গের খ্যাতিমান জমিদারী এস্টেট ছিল ডিমলা। ডিমলার জমিদার রাজা জানকী বল্লভ সেন রংপুর শহরের কেন্দ্রস্থলের বাগানবাড়িতে ১৮৯২ সালে নির্মিত হয় রংপুর পৌরসভা ভবন, যা এখন সিটি কর্পোরেশন। তিনি রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন ১৮৯২-১৮৯৪ ইং পর্যন্ত। তবে রাজা জানকী বল্লভ সেন রংপুরবাসীর কাছে অমর হয়ে থাকবেন তাঁর অসাধারণ কীর্তি শ্যামা সুন্দরী ক্যানেলের জন্য।
এখন যেটা লাল কুঠি গার্লস স্কুল, সেখানেও ছিল ডিমলার জমিদারদের বাড়ি। এই বাড়িটা অনেক জাঁকজমক ছিল। বুদ্ধদেব গুহের আত্মজীবনী ঋভুতে বার বার এসেছে এই ডিমলার জমিদার বাড়ির কথা। এছাড়াও আমার বড় মামা মরহুম এ্যাডঃ মোহাম্মদ জগলুলের অপ্রকাশিত লেখায় পেয়েছি এই জমিদার বাড়ির বিবরণ। তিনি যখন লালকুঠি স্কুলের উল্টা পাশের প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র ছিলেন, তখনও জমিদারী প্রথা চালু ছিল।
বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক গড়ে উঠেছে একটা বড় পুকুর ভর্তি করে। পুকুরটি ছিল ডিমলার জমিদারদের। সেই পুকুরের পাশে (এখন যেখানে ব্যাংকের গেট) ছিল ‘পায়রাবন্দ হাউস’। পায়রাবন্দের জমিদার, বেগম রোকেয়ার পিতা জহীরউদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবেরের রংপুর শহরের বাসা।

কামাল কাছনা ফায়ার সার্ভিস ক্যাম্পাসের ভিতরে এখনো রয়েছে ‘মন্থনা হাউস’। দারুণ স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন ভবনটি মন্থনার জমিদার ভব সুন্দরী দেবী চৌধুরানীর বাড়ি ও কাচারী। দীর্ঘদিন থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। উল্লেখ, এই জমিদারদের পূর্বসূরি হচ্ছেন, ইতিহাস খ্যাত জয় দুর্গা দেবী চৌধুরানী।
শহীদ মোবারক সরণীতে (সেন্ট্রাল রোড) অবস্থিত শতবর্ষী পুরনো জরাজীর্ণ ‘শহীদ মোসলেম উদ্দিন’ ছাত্রাবাস। সেটি আসলে ছিল নলডাংগার বিখ্যাত জমিদার গুরু প্রসন্ন লাহিড়ী, ভবানী প্রসন্ন লাহিড়ীদের বাসভবন।
রংপুর নগরীর গোমস্তা পাড়ায় আনসার অফিসের বিপরীতের এই বাসা। সমরেশ মজুমদারের ❛সাতকাহন❜ ও ❛উত্তরাধিকার❜ উপন্যাসে একজন করে মাল বাবু পেয়েছিলাম। যারা ছিলেন চা বাগানের মাল বাবু। এই প্রথম রংপুরেও কোন মাল বাবু পেলাম। ইনি সম্ভবত রেলওয়েতে চাকুরী করতেন। তবে এই বাড়ির সবচেয়ে বড় পরিচয় হতে পারে এটা সত্তর ও আশির দশকের বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও ঢাকা মোহামেডানের স্বনামধন্য গোলকিপার সান্টুদের বাসা।

রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়ায় এ্যাড আজিজার রহমান সাহেবের বাসা। তবে বাসাটা আগে ছিল আজ থেকে প্রায় ৭০/৭৮ বছর আগের রংপুরে এক নামে পরিচিত স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ ভুপেশ লাহিড়ি বাবুর বাসা হিসেবে। ভূপেশ লাহিড়ী কুলোদা গোবিন্দ তালুকদারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন । উনার ছেলে ভাবেশ লাহিড়ী পরবর্তীকালে কলকাতায় স্বনামধন্য গাইনোকোলজিস্ট হন ।

❛হাসান ভিলা❜ রংপুরের বিখ্যাত জাহেদা চক্ষু হসপিটালের ডাঃ মোঃ মোস্তাহারুল হাসান সাহেবের বাসা। বাড়িটা আসলে ছিল পীরগঞ্জের চৈত্রকোলের জমিদার, গত শতাব্দীর ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে রংপুরের একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক শ্রী কুলদা গোবিন্দ তালুকদার বাবুর বাসা। তিনি ছিলেন রংপুর কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক। রংপুর মিউনিসিপালটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। তখন বাসাটার নাম ছিল ❛তালুকদার লজ❜। খুব সম্ভবত দেশভাগের সময় তিনি বাসাটা এক্সচেঞ্জ করেছেন চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ হাসান সাহেবের বাবার সাথে। এই কুলদা বাবুর আরেকটা বাসা ছিল রংপুর স্টেশন রোডে (শাপলা হলের পিছনে) ❛নিবেদিতা ভবন❜, যা তার কন্যা নিবেদিতা তালুকদারের নামে নামকরণ কৃত।

বর্তমানে যেখানে সরকারী কমার্স কলেজের অবস্থান ঐ অঞ্চলে ছিল বামনডাংগার জমিদার বাবু বিপিন চন্দ্র রায় চৌধুরীর কাচারী ও বাসভবন। নব্বই এর দশকে ‘চোতরা পাতার’ জঙ্গলে ঘেরা ঐ বাড়ির ভগ্নাবশেষ থেকে অনেক স্বর্ণালঙ্কার।
জাহাজ কোম্পানির মালিক রেজা সাহেবের বাসা। রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্র বলা হয় ‘জাহাজ কোম্পানি মোড়’ এলাকাকে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে মিতালী রেস্টুরেন্ট থেকে বর্তমান জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্সের মধ্যে ‘জাহাজ কোম্পানি’ নামে একটি বড় ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। যার মালিক ছিলেন অবাঙ্গালী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রেজা সাহেব।এই প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও ষ্টেশনারী সামগ্রীর পাশাপাশি ঘড়ি, রেডিও, সাইকেল ইত্যাদি পাওয়া যেতো। কিন্তু অন্য একটা সূত্র বলে সেখানে জাহাজের ব্যবহৃত আসবাব পত্রসহ অন্যান্য জিনিস পাওয়া যেতো। ঢাকা চট্টগ্রামে যেমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাহাজ কোম্পানি ছাড়া সেখানে ‘ক্যাশ কোম্পানি’ নামের আরও একটা বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। যাই হোক, সেই জাহাজ কোম্পানির নামানুসারে ঐ এলাকার নাম হয়ে গেছে ‘জাহাজ কোম্পানি মোড়’।

বর্তমান সেন্ট্রাল পয়েন্ট (নর্থ ভিউ হোটেল) যেখানে, ঠিক সেই জায়গাতেই ছিল পাঙ্গা জমিদারদের দ্বিতল বা ত্রিতল কাছারিবাড়ি ‘পাঙ্গা হাউস’। সেটাও রংপুর কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে অনেক দিন ব্যবহার হয়েছে। অনেকেই বর্তমান জাতীয় পার্টি অফিসটাকে ‘পাঙ্গা হাউস’ বলে থাকেন। যা সঠিক নয়। ‘পাঙ্গা হাউস’ এ আমি নিজেও অনেক গিয়েছি।
সোনালী ব্যাংকের সুদৃশ্য গেইটের ভিতরে ব্যাংকের মূল বিল্ডিংটা ছিল টেপার (কাউনিয়া উপজেলার দক্ষিণে টেপা মধুপুর) জমিদার অন্নদা মোহন রায় চৌধুরীর কাচারী ও বাসভবন ছিল। এই জমিদারই কারমাইকেল প্রতিষ্ঠার সময় ১০ হাজারের জায়গায় ভুলে একটা শূন্য বেশী লেখার কারণে এক লক্ষ টাকাই দিয়েছিলেন।
নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় অবস্থিত ‘রহমতপুর কুঠি’, যা বর্তমানে ডায়াবেটিক সমিতি। এই ভবনটি ছিল গাইবান্ধার রহমতপুর এস্টেটের জমিদার নৃপেন্দ্র নাথ রুদ্র’র কাচারী ঘর বা ব্যবসায়িক কার্যালয়। তাই ভবনটির নাম ‘রহমতপুর কুঠি’! এই রহমতপুর কুঠিতে রঙ্গ তামাসার জলসা বসতো রংপুর অঞ্চলের জমিদারদের।

এই রহমতপুর কুঠির আনুমানিক দুই শত গজ দক্ষিণে (রাইফেলস ক্লাবের বিপরীতে) রয়েছে মহিপুরের জমিদার মৌলভী আব্দুল আজিজ চৌধুরীর কাছারি। যা এখন মরহুম শামসুর রহমান বাবু মিয়ার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। শামসুর রহমান বাবু মিয়া মহীপুরের জমিদারদের উত্তরপুরুষ।
রংপুর কলেজ ক্যাম্পাসের মসজিদ সংলগ্ন সুরম্য অট্টালিকাটা ছিল বাধা বল্লভ এর জমিদার অন্নদা প্রসাদ সেন’র কাচারী ও বাসভবন। জমিদার বাড়িটি পরবর্তী সময়ে রংপুর তথা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ মুসলিম লীগ, ন্যাপ ও বিএনপি নেতা পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক চীফ মিনিস্টার, গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়া ক্রয় করেন। এখন বাসাটা যাদু মিয়ার বাসা নামেই পরিচিত। বাসাটার নামও এখন ‘যাদু নিবাস’।

বঙ্গবন্ধু সড়কে (ক্যান্ট রোড) এএসপির বাংলোর বিপরীত দিকে (শাহান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে) ছিল ‘বর্ধন কুঠি’। যা ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বর্ধন কোটের জমিদারদের শহরের বাসভবন। এই জমিদারির শেষ জমিদার ছিলেন শৈলেশ চন্দ্র।
টিচার্স ট্রেনিং কলেজের জায়গায় ছিল নল ডাঙার জমিদারদের বাগান বাড়ি। নলডাঙার জমিদার পরিবারের ছেলে তুলসী লাহিড়ী নামকরা নাট্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উত্তরবঙ্গের খ্যাতিমান জমিদারী এস্টেট ছিল কাকিনার জমিদাররা। রংপুরে তাদের কাচারী ও বাসভবন ছিল কেরানীর পাড়ার পুরাতন আর্কেডিয়া স্কুল বিল্ডিং। এজন্য জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গেইট থেকে কেরানী পাড়া অভিমুখী সড়কটির নাম ‘কাকিনা কুঠি রোড’।
নগরীর জিএল রায় রোডে ফায়ার সার্ভিস অফিসের পিছনে এই বাসাটার অবস্থান। বাসাটা ❛বাগচি বাড়ি❜ নামে পরিচত।

এখন যেখানে প্রেসক্লাব কমপ্লেক্সের সুরম্য বহুতল ভবন,ঠিক সেখানেই ছিল কাসিমপুর এস্টেটের জমিদার মহারাজা মণীন্দ্র নন্দীর কাচারী ও বাসভবন। উল্লেখ্য, কারমাইকেল কলেজের কেবি (কাশিম বাজার) ছাত্রাবাসটি এই জমিদারদের অর্থায়নে নির্মিত হয়।
রংপুর শহরের মুন্সী পাড়াস্থ এই ভবনটা প্রয়াত জামাল উদ্দিন চৌধুরী সাহেবের বাড়ি। কোন সময় বাড়িটা নির্মিত হয়েছে তা জানা নেই। তবে দেখেই বোঝা যায় ভবনটি প্রায় শতবর্ষী। এই বাড়ির মেয়ে গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা (অবসরপ্রাপ্ত) প্রয়াত মিসেস হালিদা চৌধুরী । শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রংপুর কারমাইকেল কলেজে পড়াকালীন এই বাসাটার পাশের (ছবিতে লাল গেট, একই মালিকের বাসা) বাসাটায় থাকতেন। পরে অবশ্য তিনি এই মুন্সী পাড়ার পুত্রবধূও হন। গত শতাব্দীর প্রথম অর্ধের রংপুরের গুটিকয়েক মুসলিম আইনজীবীদের মধ্যে একজন মুন্সী পাড়ার মরহুম মোহাম্মাদ হোসেন সাহেবের পুত্র প্রয়াত প্রকৌশলী শরিফুল আলম ইমাম আহমেদ (শরীফ ইমাম) সাহেবের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের সন্তান রাজধানী কেন্দ্রিক গেরিলা দল ❛ক্র্যাক প্লাটুন❜ এর অন্যতম সদস্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাফী ইমাম রুমী।

রংপুর টেলিফোন অফিস ও টেবিল টেনিস কমপ্লেক্সের মধ্যবর্তী স্থানে রংপুর জেলা শিক্ষা অফিস ক্যাম্পাসের ভিতরের একটা টিন শেড ভবন ছিল, যার ফ্লোরটা কাঠের। ভবনটি ছিল তাজহাটের রাজা কুমার গোপাল লাল রায়ের বাগান বাড়ি।
তবারক আলীর বাসার অবস্থান কেরামতিয়া মসজিদের পিছনের দিকে কেরানী পাড়ায়। এডভোকেট মরহুম তবারক আলীর শতবছর আগের তৈরী এই বাসা। তিনি তৎকালীন পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা কমিশনার আর জেলা বোর্ডের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময়েই তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

বাকালী হাউস। নগরীর সেন পাড়ায় এই বাসাটার অবস্থান। দর্শনীয় নির্মাণ শৈলীর নজির এই ভবনটি ছিল জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগূড়ি থানার বাকালি গ্রামের ধনী জোতদার খান বাহাদুর আব্দুল করিম প্রধান সাহেবের। তিনি বাকালি হাউসের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ছেলে তজমল হোসেন প্রধান জলপাইগুড়ির বাকালি হাউসে থাকতেন। আর এক ছেলে বক্কর প্রধান রংপুরে চলে আসেন। এনার সাথেই বরেণ্য নজরুল সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত ফিরোজা বেগমের প্রথমে বিয়ে হয়েছিল।

রংপুরের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা নগরীর বেতপট্টি থেকে গোমস্তা পাড়া যাওয়ার পথে ব্রিজের একটু আগে ঐতিহ্যবাহী ‘দেওয়ান বাড়ি’। যা আসলে ছিল দেওয়ান নৃসিংহ মজুমদারের কাচারী ঘর ও বাসভবন। তিনি ছিলেন রংপুর কালেক্টরেটের সেরেস্তাদার (১৮২১-১৮২৭ ইং)। পরে ১৮৪০ সালের দিকে তিনি অসংখ্য ছোট ছোট তালুক ক্রয় করে দেওয়ান বাড়ি জমিদারী এস্টেটের মত!
বাসার নাম ❛দা স্কাই ভিউ❜। নগরীর সেন পাড়ায় প্রয়াত এ্যাড মোঃ মকবুল হোসেন সাহেবের বাসা। যদিও বাসাটা এখন বহুল পরিচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের বাড়ি হিসাবে।

রংপুর নগরীর নূরপুর জেএনসি রোডের এই বাসাটার ছবি দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। কারণ, এতো সুন্দর বাসাটার মাঝে একটা দেয়াল টেনে দেয়া হয়েছে। বাসাটার নাম “বড় মা”। আমাদের ছোট বেলায় বাসাটার রঙ ডিপ লাল-সাদা ছিল, খুবই সুন্দর লাগতো। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল ❛গেরিলা থেকে থেকে সম্মুখ যুদ্ধ❜বইয়ের লেখক সাবেক যুগ্ম সচিব মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব আলম সাহেব এই বাসার ছেলে।

❛সুখময়ী নিকেতন❜, নগরীর চাউল আমোদ পাড়ায় (ধর্মসভার পিছনে) এই বাসার অবস্থান। বাসার আদি মালিক ডাক্তার যোগেশ চন্দ্র লাহিড়ি বাবু। খুব সম্ভবত তিনি রংপুর মিউনিসিপালটির কিছু ছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম কালিদাস লাহিড়ি। কালিদাস লাহিড়ির রংপুর শহরে মেডিসিনের দোকান ছিল ❛লাহিড়ি মেডিকেল হল❜ নামে। এছাড়া তাঁর একটা ফটো স্টুডিওর নাম ছিল ❛পপুলার স্টুডিও❜।

স্টেশন রোডে ঘোড়াপীর মাজারের পাশেই এই বাসার অবস্থান। বাসার নাম ❛সূফী মঞ্জিল❜। অত্যন্ত অভিজাত বাড়ি।

বড়ই দুঃখের বিষয় এগুলো সংরক্ষণ করা উচিত ছিল তা না করে ধ্বংস করা হয়েছে ۔আজ এগুলো রক্ষা করা গেলে রংপুর একটা পর্যটন শহরে পরিণত হতো ۔পৃথিবীর কোন দেশ নিজের ঐতিহ্যকে নষ্ট করে না ,একমাত্র বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম মানুষ শুধু দখল করায় ব্যস্ত
Courtesy : Riyadh Anwar Shubho